ময়মনসিংহে মর্গের ভেতর তরুণীর লাশ মরদেহ ধর্ষণ — আদালতে লাশবাহকের স্বীকারোক্তি।
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে থাকা এক তরুণীর মরদেহ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার লাশবাহক আবু সাঈদ (১৯) (২২ অক্টোবর) বুধবার বিকেলে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল হকের আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেপ্তার যুবকের নাম আবু সাঈদ (১৯)। তিনি হালুয়াঘাট উপজেলার খন্দকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। প্রায় তিন বছর ধরে হালুয়াঘাট থানা থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে মরদেহ আনা–নেওয়ার কাজ করতেন আবু সাঈদ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার মধ্যরাতে (১৯ অক্টোবর) হালুয়াঘাটের একটি গ্রামে ২০ বছর বয়সী এক তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শেরপুর সরকারি কলেজের অনার্সের এই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা। মেয়েটি মৃত্যুর আগে দুই পাতার সুইসাইড নোট লিখে রেখে যান। তাতে ‘আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী আমার দুর্ভাগ্য। আমার মৃত্যুর কোনো কারণ নেই। এই দুনিয়া থেকে আমার মন উঠে গেছে তাই আমি চলে গেছি,’ এ কথাসহ আরও নানা কথা লেখা ছিল। গত সোমবার সকালে নিহত তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা হয়।
পুলিশ বলছে, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মর্গে মরদেহ রেখে বের হওয়ার পর দ্বিতীয়বার মর্গে প্রবেশ করেন লাশ বহনকারী আবু সাঈদ। ওই সময় তরুণীর মরদেহকে ধর্ষণ করেন। সেদিন ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে চিকিৎসক ধর্ষণের আলামত পেলে বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ সোমবার রাতেই আবু সাঈদকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে আজ বিকেলে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।
তরুণীর মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এন এম আল মামুন। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ময়নাতদন্তের সময় মরদেহে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানানো হয়।
মরদেহ ধর্ষণের ঘটনা খুবই বিরল উল্লেখ করে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ধর্ষণের আলামত পাওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যার দিকে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তখন তারা মরদেহ আনা–নেওয়ার কাজ করা সাঈদকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আবু সাঈদ মরদেহ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘একবার মরদেহ মর্গে রেখে আসার পর সুরতহালের কাগজ আনার জন্য দ্বিতীয়বার গিয়ে মরদেহ ধর্ষণ করে বলে আমাদের জানায় আবু সাঈদ। এমন ঘটনা সে প্রথমবার ঘটিয়েছে দাবি করে। মরদেহ ধর্ষণের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে ধর্ষণ, লাশ অবমাননাসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা শেষে বুধবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। সেখানেও সে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
লাশের সাথে ঘটা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—
এ ঘটনার দায়ভার কি শুধুই ধর্ষকের?
যদি লাশবাহকই ধর্ষক হয়ে থাকে, তবে পোস্টমর্টেমের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কি ধর্ষণের সহায়তাকারী নন?
যদি তা না হয়, তবে লাশবাহক প্রথমে লাশ রেখে যাওয়ার পর আবার কীভাবে সুরতহাল শেষ হওয়ার আগেই মর্গে প্রবেশ করতে পারল?
যাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এমন জঘন্য ও নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ও আইনের আওতায় আনার জন্য রাষ্ট্র ও প্রশাসনের দৃঢ় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
© All rights reserved © 2025 Coder Boss