মোঃ রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ, বগুড়া।
বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ আজ গভীর শোক ও বেদনায় নিমজ্জিত। শিক্ষক নেতা এ কে এম পান্না মিয়ার অকাল প্রয়াণ আমাদের সকলকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। তাঁর চলে যাওয়া শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং বাংলাদেশের শিক্ষা অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, বাশিস বগুড়া জেলার যুগ্ম সম্পাদক এবং শহীদ জিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি যে নিষ্ঠা, কর্মদক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, তা আমাদের শিক্ষা আন্দোলনের ইতিহাসে অমলিন হয়ে থাকবে।
এ কে এম পান্না মিয়া ছিলেন একাধারে শিক্ষক, সংগঠক, নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব এবং শিক্ষার্থীদের অকৃত্রিম বন্ধু। তাঁর নেতৃত্ব ছিল দৃঢ়, কিন্তু আচরণ ছিল কোমল ও মানবিক। তিনি মানুষের প্রতি সম্মান, সহানুভূতি ও দায়বদ্ধতাকে নিজের জীবনের মূলনীতি হিসেবে ধারণ করতেন। শিক্ষকতা পেশাকে তিনি শুধু চাকরি হিসেবে দেখেননি—দেখেছেন সামাজিক দায়িত্ব, মানবিক সেবা এবং জাতি গঠনের মহান ব্রত হিসেবে।বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে যখনই সংকট এসেছে, যখনই শিক্ষক সমাজকে সংগঠিত করতে হয়েছে, তখনই পান্না মিয়া ছিলেন সামনের সারিতে। তাঁর বক্তব্যে ছিল যুক্তির দৃঢ়তা, কণ্ঠে ছিল প্রতিবাদের সাহস এবং কর্মকাণ্ডে ছিল বাস্তবমুখী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কাজ করেননি; বরং শিক্ষক সমাজের ন্যায্য অধিকার আদায়ে অসম্ভব শ্রম ও মনোযোগ দিয়েছেন। আন্দোলন, আলোচনা, মতবিনিময়—সবক্ষেত্রেই তাঁর অংশগ্রহণ ছিল সক্রিয় ও দায়িত্বশীল।
সহকর্মীরা তাকে স্মরণ করেন অতি সহজ-সরল, হাস্যোজ্জ্বল ও কর্মঠ একজন মানুষ হিসেবে। তিনি ছিলেন সবার পরামর্শদাতা, সবার উদ্বেগ-অভিযোগের শ্রোতা। যে কোনো শিক্ষক বিপদে পড়লে পান্না মিয়া এগিয়ে যেতেন নিজের উদ্যোগে। সংগঠনের ভেতরকার ঐক্যকে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। তাঁর আন্তরিকতা ও আহ্বানে অনেক কঠিন পরিস্থিতিও সহজ হয়ে যেত। তাঁর কণ্ঠে ছিল নেতৃত্বের দৃঢ়তা, আর হৃদয়ে ছিল অগাধ মমতা।
শিক্ষকতা জীবনে তাঁর অবদান ছিল বহুমাত্রিক। শহীদ জিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে শুধু একাডেমিক উৎকর্ষেই এগিয়ে নেননি, বরং শিক্ষার্থীদের মানবিক গুণাবলী গঠনে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। শিক্ষা শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়—নৈতিকতা, মূল্যবোধ, মানবতা এবং দেশপ্রেমও শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ—এই বিশ্বাস তিনি ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বিদ্যালয়টি হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের প্রেরণার কেন্দ্র।
কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস—এমন এক মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের মাঝ থেকে ছিনিয়ে নিল। তাঁর অকাল মৃত্যুতে শিক্ষক পরিবার, শিক্ষাঙ্গন, সহকর্মী, শিক্ষার্থী এবং সর্বস্তরের মানুষের মাঝে নেমে এসেছে গভীর শোক। যে হাসিমাখা মুখ, যে আন্তরিক উপস্থিতি, যে প্রেরণা, যে সংগ্রামী মন—সবই যেন মুহূর্তেই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। এমন শূন্যতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
শোকের মধ্যেও আমরা তাঁর কর্মময় জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর রেখে যাওয়া মূল্যবোধ, সংগ্রামী চেতনা ও শিক্ষার প্রতি অঙ্গীকার আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হয়ে থাকবে। তিনি যে শিক্ষা আন্দোলনের বীজ বপন করেছেন, সেটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এখন আমাদের সবার। তাঁর জীবন আমাদের শিখিয়েছে—সততা, পরিশ্রম এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসাই একজন নেতার সত্যিকারের পরিচয়।
এই শোকাবহ সময়ে আমরা মরহুম এ কে এম পান্না মিয়ার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তাঁর স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয় মানুষরা যেন এই গভীর দুঃখ কাটিয়ে উঠার শক্তি পান—এই কামনা করি। প্রিয় মানুষকে হারানোর বেদনা ভাষায় প্রকাশের নয়, কিন্তু এ কথা নিশ্চয়ই বলা যায় যে, পান্না মিয়া কোনোদিন ভুলে যাওয়ার মানুষ নন। তাঁর কর্মই তাঁকে অমর করে রাখবে।
তবে দুঃখ জনক হলেও সত্য তিনি বগুড়ার নেতৃবৃন্দ দ্বারা নিগৃহ ছিলেন। সর্বশেষ বগুড়ার একজন নেতাকে চাঁদা দেওয়ার পও ২০২৫ সালে কেন্দ্রে কোন পদ পাননি। আবার একজন কর্মচারীর একটি বড় অংকের টাকার দুর্নীতির ডকুমেন্টও আমার কাছে দিয়ে রেখেছেন।
পরিশেষে, পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে আমরা দোয়া করি—মরহুমের সকল সৎকর্ম গ্রহণ হোক, তাঁর ভুলত্রুটি ক্ষমা করে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করা হোক। আমিন।








Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.