শনিবার (১৫ নভেম্বর) কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।
তিনি জানান, ১৪ নভেম্বর সকালে কুমিল্লার লাকসামের বড় বিজরা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে শামীমা আক্তারকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩।
তিনি আরও জানান, গত ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় ব্যবসায়ী আশরাফুল হক তার ব্যবসা সংক্রান্ত পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে একই গ্রামের বন্ধু জরেজুল ইসলামের সঙ্গে রংপুর থেকে ঢাকায় রওনা দেন।
পরদিন সকাল থেকে আশরাফুলের পরিবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ১৩ নভেম্বর হাইকোর্টস্থ পানির পাম্পসংলগ্ন দুটি নীল রঙের ড্রামের ভেতর থেকে এক অজ্ঞাত পুরুষের ২৬ খণ্ডের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে সিআইডি নিশ্চিত হয়—লাশটি নিখোঁজ ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের।
ওইদিন রাতেই নিহতের বোন বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় আশরাফুলের বন্ধু জরেজুল ইসলামকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরপর তদন্তে নেমে জরেজুলের প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নিহত আশরাফুলের রক্তমাখা সাদা পায়জামা–পাঞ্জাবী, হত্যার কাজে ব্যবহৃত দড়ি, কসটেপ, একটি গোলগলা গেঞ্জি এবং একটি হাফপ্যান্ট—একটি বস্তায় মুখবন্ধ অবস্থায় শনির আখড়ার নূরপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন বলেন, শামীমার সঙ্গে জরেজের এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জরেজ তাকে জানায়—তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যাবে। এর মধ্যে জরেজ নেবে ৭ লাখ, শামীমা পাবে ৩ লাখ।
জানায়—তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যাবে। এর মধ্যে জরেজ নেবে ৭ লাখ, শামীমা পাবে ৩ লাখ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা এক মাস আগে থেকে আশরাফুলকে মোবাইলে যোগাযোগ করে, ভিডিও–অডিও কলে কথা বলে তাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে।
১১ নভেম্বর রাত ৮টায় জরেজ আশরাফুলকে নিয়ে ঢাকায় আসে। ১২ নভেম্বর তারা তিনজন শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন।
তিনি আরও জানান, ঢাকায় আসার আগেই জরেজ তার প্রেমিকা শামীমাকে নির্দেশ দেয়, তিনি যেন আশরাফুলের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে এবং সেই ভিডিও দেখিয়ে টাকা আদায় করা যায়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে আশরাফুলকে অচেতন করে শামীমা। এরপর বাইরে থেকে জরেজ অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে। ভিডিও শামীমার মোবাইলে সংরক্ষিত ছিল, যা উদ্ধার করা হয়েছে।
শামীমার বরাত দিয়ে র্যাব কর্মকর্তা জানান, ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ তার হাত দড়ি দিয়ে বাঁধে এবং মুখ কসটেপ দিয়ে আটকে দেয়।
অতিরিক্ত ইয়াবা সেবনের পর উত্তেজিত হয়ে জরেজ অচেতন অবস্থায় আশরাফুলকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। আঘাত ও শ্বাসরোধে ঘটনাস্থলেই আশরাফুলের মৃত্যু হয়। পরে একই ঘরে লাশ রেখে জরেজ ও শামীমা রাতে অবস্থান করে এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
তিনি জানান, মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে ১৩ নভেম্বর সকালে জরেজ নিকটস্থ বাজার থেকে চাপাতি ও ড্রাম কিনে আনে। চাপাতি দিয়ে লাশ ২৬ টুকরো করে দুইটি নীল ড্রামে ভরে রাখে। দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রামগুলো নিয়ে বের হয়। ধরা পড়ার আশঙ্কায় তারা সিএনজি পরিবর্তন করে।
দুপুর ৩টা ১৩ মিনিটে হাইকোর্ট মাজার গেটের কাছে এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে ড্রাম দুটি একটি বড় গাছের নিচে ফেলে দ্রুত অটোযোগে সায়েদাবাদে চলে যায়।
সেখানে গিয়ে জরেজ শামীমাকে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে বলে এবং নিজে রংপুরে চলে যাবে জানায়। শামীমা কুমিল্লায় চলে যায় এবং জরেজের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, শামীমার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। তবে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো শত্রুতা ছিল কিনা, তা মূল আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে।
উল্লেখ্য, এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি জরেজুল ইসলামকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.